শিশুর স্বাস্থ্য ও খাবারের পুষ্টিগুণ নিয়ে সচেতন হওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চার শারীরিক এবং মানসিক উন্নতির জন্য সঠিক খাবারের প্রয়োজন। কখন কী খাবার দেওয়া উচিত, কীভাবে খাবারগুলো প্রস্তুত করা উচিত – এগুলি জানা অত্যন্ত জরুরি।
আলোচনা করব, শিশুর খাবারের গুরুত্ব, কী কী খাবার শিশুর জন্য উপকারী, এবং কখন কোন খাবার দেওয়া উচিত এবং আপনার বেবির খাবার নিয়ে সকল প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।
১. কেন শিশুর খাবার নিয়ে সচেতন হওয়া জরুরি?
শিশুর খাবার নিয়ে সচেতন হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এটি তাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য সহায়ক যে খাবার শিশুরা খায়, তা সরাসরি তাদের স্বাস্থ্য এবং বিকাশে প্রভাব ফেলে। যদি শিশুর শরীরে পুষ্টির অভাব হয়, তবে তা তাদের শারীরিক বৃদ্ধি এবং মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী অপুষ্টি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং তার শারীরিক শক্তিও দুর্বল হয়ে যায়।
অন্যদিকে, সঠিক খাবার দিলে শিশুর বিকাশ দ্রুত হয় এবং তারা সুস্থ থাকে। সঠিক পুষ্টি শিশুকে শক্তিশালী, চনমনে এবং সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। শিশুদের পুষ্টি সঠিকভাবে নিশ্চিত করা তাদের জীবনের প্রথম কয়েক বছরে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই সময়টা তাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে, আজকাল অনেক শিশুই প্রক্রিয়াজাত খাবার খায়, যা তাদের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায় না। ফলে তাদের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। এ কারণে শিশুর খাবারে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত। যতটুকু সম্ভব প্রাকৃতিক, পুষ্টিকর এবং সহজপাচ্য খাবারই তাদের দেওয়া উচিত।
২. শিশুর সর্বপ্রথম খাবার কেমন হওয়া উচিত?
শিশুর প্রথম খাবার হলো মায়ের বুকের দুধ, যা জন্মের পর প্রথম ছয় মাসে শিশুর প্রধান খাবার হওয়া উচিত। বুকের দুধে থাকা উপকারী পুষ্টি উপাদান শিশুর শরীরের জন্য আদর্শ। এতে প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে, যা শিশুর শরীরের সব ধরনের পুষ্টি চাহিদা পূরন করে। বুকের দুধ শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে এবং এটি তাদের জন্য সবচেয়ে সহজপাচ্য খাবার।
শিশুর প্রথম কয়েক মাসে বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোনো খাবার দেয়া ঠিক না। এর মাধ্যমে শিশুর পেটের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং তাদের পুষ্টির অভাবও দূর হয়। যতদিন না শিশুর শরীরের অন্যান্য খাবার সহ্য করার মতো শক্তি তৈরি হয়, ততদিন বুকের দুধই শিশুর একমাত্র খাবার হতে হবে।
কিন্তু যখন শিশুর বয়স ৬ মাস হয়ে যায়, তখন তাকে আরও কিছু বাড়তি খাবার দেয়া শুরু করা যায়। এই সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে শিশুর খাবারের স্বাদ এবং পছন্দ তৈরি হতে শুরু করে।
৩. শিশুর প্রথম সলিড খাবার
১. সুজি
সুজি প্রথম সলিড খাবার হিসেবে খুব ভালো। এটি খুব নরম এবং সহজে পেটের মধ্যে যায়। মিষ্টি স্বাদও থাকে, যা শিশুর পছন্দ হতে পারে।
২. ফলের পিউরি
শিশুর প্রথম খাবারে কলা বা আপেলের পিউরি দেওয়া যেতে পারে। এগুলো সহজে হজম হয় এবং শিশুদের জন্য পুষ্টিকর।
৩. গাজরের পিউরি
গাজরে থাকে প্রচুর ভিটামিন আর খনিজ, যা শিশুর শারীরিক উন্নতির জন্য উপকারী। এতে শিশুর পেটও ভালো থাকে এবং সহজে হজম হয়।
৪. মিষ্টি আলুর পিউরি
মিষ্টি আলু শুধু পুষ্টিকর নয়, এটি হজমের জন্যও খুব উপকারী। শিশুর জন্য এটি একটি ভালো ও স্বাস্থ্যকর খাবার হতে পারে।
৪. শিশুর প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধই কি যথেষ্ট?
বুকের দুধ শিশুর প্রথম ছয় মাসের জন্য একেবারে উপযুক্ত খাবার। এতে শিশুর শরীরের সব ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায়, যা তাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। বুকের দুধের মধ্যে থাকা অ্যান্টিবডি শিশুকে নানা ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। তাই এই প্রথম ছয় মাসে বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোনো খাবারের প্রয়োজন নেই।
কিন্তু কিছু মা মনে করেন, বুকের দুধ দেওয়ার পর অন্য কিছু দেওয়া উচিত, যেহেতু শিশুর জন্য এক ধরনের একঘেয়ে হয়ে যায়। তবে, বাস্তবতা হলো, শিশুর প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধই তার জন্য একমাত্র প্রাথমিক খাবার। বাচ্চাকে অন্য কোনো খাবার দেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বুকের দুধ ছাড়া বিকল্প হিসেবে কিছু প্রাকৃতিক দুধ বা উপাদান ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এগুলি খুবই সতর্কতার সাথে এবং ডাক্তারের পরামর্শে দেওয়া উচিত।
৫. বয়স অনুযায়ী শিশুর পুষ্টিকর খাবারের তালিকা

শিশুর বয়স অনুযায়ী তাদের খাবারও পরিবর্তিত হয়। জন্মের পর থেকে শিশুর পুষ্টি চাহিদা বাড়ে, আর তাই তাদের খাদ্য তালিকা সময় সময় পরিবর্তিত হতে থাকে। শিশুদের খাবারের তালিকা তৈরি করতে হলে প্রথমে তাদের বয়স জানা গুরুত্বপূর্ণ।
৫ মাসের শিশুর খাবার তালিকা:
এই বয়সে শিশুর প্রধান খাবার বুকের দুধ, তবে কিছু মা যদি নিজের দুধ না পান, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে উপযুক্ত বিকল্প দেওয়া যেতে পারে।
৬ মাসের শিশুর খাদ্য তালিকা:
ছয় মাস বয়স থেকে শিশুর মুখে কিছু তরল খাবার দেওয়া শুরু করা যেতে পারে, যেমন সুজি, ফলের পিউরি, বা খিচুড়ি।
৭-৮ মাসের শিশুর খাবার তালিকা:
এ বয়সে শিশুর খাবারে তরল থেকে ঘন খাবারের দিকে পরিবর্তন শুরু করা যেতে পারে। এই সময় তারা নরম সেদ্ধ সবজি, ছোট ছোট টুকরো করে কাটা ফল, অথবা এক চামচ করে ঘন সুজি বা খিচুড়ি খেতে পারে।
৯-১২ মাস বয়সের শিশুর খাবার তালিকা:
নয় থেকে বারো মাসের শিশুদের খাবারের তালিকা আরও বৈচিত্র্যময় হতে পারে। মিষ্টি আলু, ডিম, ফলের পিউরি, রুটি, ভাত ইত্যাদি খাওয়ানো যায়।
১-২ বছরের শিশুর খাবার তালিকা:
এক থেকে দুই বছর বয়সী শিশুকে সেদ্ধ সবজি, ফল, সুষম খাবার দেওয়া উচিত।
৩-৪ বছরের শিশুর খাবার তালিকা:
এই বয়সে শিশুর খাবারে মাংস, মাছ, দুধ, ভাত, রুটি ইত্যাদি থাকতে পারে।
৬. কোন সময় কি খাওয়ানো উচিত?
শিশুর খাবারের সময়ও গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিশুর অভ্যাস এবং স্বাস্থ্য তৈরির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সকালে: শিশুর সকালের খাবার হতে হবে পুষ্টিকর। ডিম, সেদ্ধ ভাত বা ওটমিল শিশুকে দিন। এতে প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া যায়।
দুপুরে: দুপুরে শিশুদের হালকা খাবার দেওয়ায় ভালো। এক বাটি স্যুপ, সবজি, মাংস বা মাছ হতে পারে।
বিকেলে: বিকেলে ফল, দুধ, বা কিছু সহজ খাবার দিয়ে শিশুর খাবারের চাহিদা পূরণ করুন।
রাতে: রাতে শিশুকে সুষম এবং সহজপাচ্য খাবার দিতে হবে। ভাত, ডাল, সবজি ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে।
৭. শিশুদের খাওয়ানোর সময় যা মাথায় রাখতে হবে
শিশুকে খাওয়ানোর সময় অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়। প্রথমত, শিশু ক্ষুধার্ত না হলে তাকে খাওয়ানো উচিত নয়। অনেক সময় বাবা-মা শিশুকে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু এটা ঠিক নয়। শিশু যদি ক্ষুধার্ত না হয়, তাহলে তাকে জোর করে খাওয়ালে সে খেতে চায় না বা তার খাওয়ার আগ্রহ কমে যায়। তাই শিশুকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী খেতে দিন, কখনও তাকে খুব বেশি চাপ দেবেন না।
পরবর্তী বিষয়টি হলো, শিশুর খাওয়ার পরিবেশ হওয়া উচিত শান্ত এবং আনন্দদায়ক। খাওয়ার সময় শিশুকে উত্তেজিত বা নারাজ অবস্থায় রাখা উচিত নয়। পরিবেশ শান্ত হলে শিশু খেতে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে। তাই খাওয়ার সময় টিভি বা অযথা শব্দ না করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করুন। এই পরিবেশ শিশুর খাওয়ার আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করবে।
এছাড়া, শিশুকে একবারে বেশি খাবার না দিয়ে অল্প অল্প করে খাওয়ানো উচিত। একসাথে অনেক খাবার দিলে শিশুর কাছে তা চাপ হয়ে যেতে পারে। এমনকি অনেক সময় শিশুর পেটও একসাথে এত খাবার নিতে পারে না। তাই তার পক্ষে সহজে হজম হওয়ার মতো অল্প পরিমাণে খাবার দেওয়া ভাল। খাবারটি রঙিন, আকর্ষণীয় এবং স্বাদে সুস্বাদু হলে শিশুর খাওয়ার আগ্রহ আরো বাড়বে।
শিশুদের খাওয়ানোর রুটিনও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন একই সময়ে খাবার দেওয়া হলে শিশুর শরীর সেই রুটিন অনুযায়ী অভ্যস্ত হয়ে যাবে, এবং খেতে আগ্রহী হবে। খাদ্য গ্রহণের সময় শিশুকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা প্রয়োজন, যাতে সে খাওয়ার সময় খুশি থাকে এবং সঠিকভাবে পুষ্টি পায়।
৮. খাবারের প্রতি বাচ্চার আগ্রহ যেভাবে তৈরি করবেন
শিশুর খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর জন্য প্রথমে খাবারটি রঙিন এবং আকর্ষণীয় করতে হবে। শিশুরা সাধারণত রঙিন খাবার পছন্দ করে। তাই খাবারের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ফল বা সবজি দিয়ে সাজিয়ে দিলে শিশুর খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। যেমন, গাজর, শসা, আপেল বা কলা কেটে ছোট ছোট টুকরো করে দিলে শিশুরা আনন্দিত হয় এবং তারা খাবারে মনোযোগ দেয়।
এছাড়া, খাবার খাওয়ানোর সময় ধৈর্য রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় শিশু খেতে চাইবে না, কিন্তু মা-বাবাদের ধৈর্য ধরে শিশুকে খাবার দেওয়া উচিত। শিশুর মনোযোগ না থাকলে, তাকে বিরক্ত না করে, ধীরে ধীরে খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। এটাও মনে রাখবেন যে, প্রতিদিন নতুন খাবার দেওয়ার চেষ্টা করুন যাতে শিশুর খাবারের প্রতি আগ্রহ বজায় থাকে।
একেবারে নতুন খাবার দিয়ে শুরু করার আগে, কিছু পরিচিত খাবার বারবার পরিবেশন করতে পারেন। অনেক শিশু একেকটি খাবার বারবার খেতে ভালোবাসে। তাছাড়া, বারবার একই খাবার দিলে শিশুর স্বাদ এবং অভ্যস্ততা তৈরি হয়, যা ভবিষ্যতে তাকে আরও খাবারের জন্য আগ্রহী করবে।
বাচ্চার খাবারের প্রতি আগ্রহ তৈরি করার আরেকটি উপায় হল, তাকে খাওয়ার সময় ভালোবাসা এবং উৎসাহ প্রদান করা। যদি মা-বাবা বা পরিবারের অন্য সদস্যরা শিশুকে উৎসাহিত করে খাওয়াতে থাকে, তবে শিশুর মনে সঠিক বার্তা পৌঁছায় এবং সে খেতে আগ্রহী হয়। শিশুকে খাওয়ার সময় প্রশংসা করা, তাকে সাহস দেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
৯. বাচ্চাদের খাবার টেবিল যেমন হতে হবে
শিশুর খাবার টেবিল যেন পরিষ্কার এবং আরামদায়ক হয়। খাওয়ার পরিবেশ যতটা ভালো হবে, সে ততই খাওয়ার প্রতি আগ্রহী হবে। প্রথমেই, খাবারের টেবিলটি পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। যেখানে শিশু খাবে সেখানে কোন ধরনের ময়লা বা অপরিষ্কার কিছু না রাখাই ভালো।
শিশুর জন্য যথাযথ উচ্চতার চেয়ার এবং টেবিল ব্যবহার করা উচিত। যদি টেবিল বা চেয়ার শিশুদের আকারের অনুযায়ী না হয়, তাহলে তারা আরামদায়কভাবে খেতে পারে না। টেবিলের উচ্চতা তার সাইজের সাথে মেলে এমন হওয়া উচিত, যাতে শিশুর খাওয়া আরও সহজ হয়।
খাবারের সময় টিভি বা মোবাইল ব্যবহার না করাই ভাল। অনেক বাবা-মা শিশুকে খাওয়ানোর সময় টিভি বা মোবাইল দেখানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু এতে শিশুর মনোযোগ খাবারে থাকে না। খাবারের সময় যেন শিশুর পুরো মনোযোগ খাবারের দিকে থাকে, সে জন্য টিভি বা মোবাইল বন্ধ রেখে খাওয়ানো উচিত।
পরিবারের সবাই একসাথে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার একসঙ্গে খেলে, এটি শিশুর খাওয়ার রুটিনকে আরও শক্তিশালী করে এবং তাকে সামাজিকভাবে উন্নত করে। খাবারের সময় শিশুকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসিয়ে খাওয়ানো উচিত, যাতে সে আনন্দিত এবং খাওয়ার প্রতি আগ্রহী হয়।
১০. প্রতিদিন কতবার খাওয়ানো উচিত?
শিশুকে প্রতিদিন কতবার খাওয়ানো উচিত, তা তার বয়সের ওপর নির্ভর করে। প্রথমদিকে, শিশুদের খাওয়ার পরিমাণ এবং সময় তাদের শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী বাড়ে বা কমে। এখানে কিছু সাধারণ নিয়ম দেওয়া হলো:
৬-১২ মাস: এই বয়সে শিশুকে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ বার খাবার দেওয়া যেতে পারে, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বুকের দুধ। যদি শিশুর পেট খালি না থাকে, তাকে সহজপাচ্য খাবার দিন। তবে, এ সময় শিশুর প্রধান খাবার হবে বুকের দুধ।
১-২ বছর: এই বয়সে শিশুর খাওয়ার রুটিনে আরও বৈচিত্র্য আসতে পারে। তাকে ৩ বেলা খাবার এবং ২টা ছোট স্ন্যাকস দেওয়া উচিত। তবে, অতিরিক্ত খাবার দিতে গিয়ে তাকে খুব ভারী না করে অল্প পরিমাণে সব খাবার দিন।
২-৫ বছর: এই বয়সে শিশুর খাদ্যাভ্যাস অনেকটাই তৈরি হয়ে যায়। তাকে ৩ বেলা খাবার এবং ১-২ বার স্ন্যাকস দেওয়া উচিত। শিশুর ক্ষুধা বুঝে খাবার সময় ও পরিমাণ পরিবর্তন করা যেতে পারে।
১১. বাচ্চাদের কোন খাবারগুলো খাওয়ানো উচিত নয়?
শিশুদের জন্য কিছু খাবার ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন, প্রক্রিয়াজাত খাবার, খুব তেল বা চিনি বেশি মেশানো খাবার শিশুর শরীরের জন্য ভালো নয়। এসব খাবারে পুষ্টির অভাব থাকতে পারে এবং শিশুদের ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে।
চকলেট, কোল্ড ড্রিঙ্ক, প্যাকেটজাত মিষ্টি খাবার – এগুলি শিশুর জন্য ক্ষতিকর। শিশুকে বেশি মিষ্টি বা তেলযুক্ত খাবার দিলে তার দাঁতের ক্ষতি হতে পারে এবং হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। একইভাবে, ফাস্ট ফুড এবং খুব বেশি প্রসেসড খাবার শিশুর শরীরের জন্য আদর্শ নয়।
এছাড়া, সয়াবিন তেল, অতিরিক্ত নুন বা মসলাযুক্ত খাবার শিশুর ক্ষতিকারক হতে পারে। এর ফলে তাদের পেটের সমস্যা হতে পারে এবং অল্প বয়সে আরও অনেক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব খাবার থেকে শিশুকে দূরে রাখাই ভালো।
১২. শিশুর না খাওয়ার সম্ভাব্য কারণসমূহ
কখনো কখনো, বাচ্চারা খেতে চায় না, এবং এ বিষয়টি অনেক মা-বাবার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে, এটি একেবারে সাধারণ একটি সমস্যা। বাচ্চাদের খাবারে আগ্রহ না থাকার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে একটি হলো, তাদের দাঁত উঠা। যখন শিশুর দাঁত উঠতে থাকে, তখন মুখে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে, যার কারণে তারা খেতে চায় না।
আরেকটি কারণ হল খাবারের প্রতি অনাগ্রহ। অনেক সময় শিশুদের ক্ষুধা না লাগলে তারা খেতে চায় না। তখন তাদের কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখুন, ক্ষুধা আসলেই তখন তারা খাবে। একইভাবে, পেটের সমস্যা থাকলেও শিশু খেতে পারে না। যেমন, গ্যাস বা পেটের ব্যথা তাদের খাওয়ার আগ্রহ কমিয়ে দিতে পারে। এই সমস্যা কাটানোর জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত।
শিশু খেতে চায় না এমন সময় মা-বাবাকে ধৈর্য ধারণ করা প্রয়োজন। অনেক সময় মা-বাবা শিশুদের জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু এটি শিশুর মানসিকতা এবং খাবারের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দেয়। এতে শিশুর খাওয়ার সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই, শিশুকে খাওয়ানোর সময় তাদের খাওয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে হবে, এবং কখনোই জোর করে খাওয়ানো উচিত নয়।
১৩. বাচ্চার ওজন কম হলে উপযুক্ত খাবার
বাচ্চার ওজন যদি কম হয়, তবে তার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেওয়া খুবই জরুরি। প্রথমত, শিশুকে খাবারের প্রতি আগ্রহী করার জন্য তাকে পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যকর এবং শক্তির উৎস খাবার দিতে হবে। যেমন, ডিম, পনির, দুধ, মিষ্টি আলু, কলা, এবং অন্যান্য ফলমূল শিশুদের ওজন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এই ধরনের খাবার শিশুর জন্য প্রাকৃতিক শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
ওজন বাড়ানোর জন্য খাবারের পরিমাণও বাড়াতে হবে, তবে খুব বেশি খাওয়ানো উচিত নয়। শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ভারসাম্যপূর্ণ খাবার দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য, ভাত, মাছ, মাংস, ডাল, সবজি এবং ফলমূল এই ধরনের খাবারগুলি শিশুর দেহে পুষ্টি পৌঁছাতে সাহায্য করবে।
শিশুর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এবং ওজন বাড়াতে মায়ের পুষ্টির উপরও নজর দেওয়া উচিত। মা যদি ভালোভাবে পুষ্টি নেন, তাহলে শিশুর দেহও তা গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। তাই, শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে মায়েরও সঠিক খাবার খাওয়া উচিত।
১৪. বাচ্চার ওজন বেশি হলে উপযুক্ত খাবার
অতিরিক্ত ওজনও শিশুদের জন্য একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বেশি ওজন শিশুর শারীরিক সমস্যা তৈরি করতে পারে, যেমন পা বা হাঁটুতে চাপ পড়া, হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি ইত্যাদি। তাই শিশুর খাবারের পরিমাণ ও ধরনের উপর নজর রাখা জরুরি। প্রথমত, অতিরিক্ত মিষ্টি, চিপস বা তেলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এসব খাবার শিশুর শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করে, যা শরীরের জন্য ভালো নয়।
শিশুর খাবারে সবজি, এবং ফলমূল বেশি দেওয়ার চেষ্টা করুন। শাক-সবজি, ফলমূল, এবং অন্যান্য কম চর্বিযুক্ত খাবার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া, চিনি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার পরিমাণ কমিয়ে ফেললে শিশুর শরীরে ভালো পরিবর্তন দেখা যাবে। পানি খাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শরীরের জমে থাকা অতিরিক্ত তেল বের করে দেয়।
পরিমাণে খাবার দেওয়া জরুরি, তবে শিশুকে না খাওয়ানোর মতোও হওয়া উচিত নয়। প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে খাবার গ্রহণ করে শিশুদের শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূর্ণ করতে হবে। একইভাবে, শিশুকে খেলাধুলা এবং শারীরিক অনুশীলন করানোর মাধ্যমে তাকে সুস্থ রাখা যায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য যে খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা উচিত, তা হল নিয়মিত খাবার গ্রহণ এবং অনিয়মিত স্ন্যাকস বা মিষ্টি খাবার কম খাওয়া। সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে শিশুর শরীর সুস্থ থাকবে এবং অতিরিক্ত ওজনও কমবে।
১৫. বেবিবাইটস হোমমেড বেবি ফুড
শিশুর জন্য সঠিক খাবার নির্বাচনের সময় ঘরে তৈরি খাবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, ঘরে তৈরি খাবারে কোনো কৃত্রিম উপাদান, সংরক্ষণকারী বা অস্বাস্থ্যকর উপাদান থাকে না। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং শিশুর শরীরের জন্য খুবই উপকারী। শিশুর জন্য সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য মায়েরা অনেক সময় চেষ্টা করেন ঘরেই খাবার তৈরি করতে, কিন্তু অনেক সময় তাতে সময় বা উদ্যোগের অভাব থাকে। এখানে বেবিবাইটস হোমমেড বাচ্চাদের খাবার মায়েদের জন্য একটি দারুণ সমাধান।
বেবিবাইটস হোমমেড খাবারের মাধ্যমে মায়েরা নিজের সময় বাঁচাতে পারেন, পাশাপাশি শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারেন। এই খাবারগুলো সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর, যা শিশুর শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছাতে সাহায্য করে। বেবিবাইটসের প্রতিটি খাবার শিশুদের জন্য প্রস্তুত করা হয় বিশেষভাবে, যাতে তারা গুণগত মানে পরিপূর্ণ থাকে এবং কোনো ধরনের কৃত্রিম উপাদান না থাকে।
আমাদের কিছু জনপ্রিয় রেসিপি ও তার গুণাগুণ:
Dates Sugar:
ডেট সুগার হলো একটি প্রাকৃতিক মিষ্টি, যা শিশুদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। এটি প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিনের উৎস। ডেট সুগারের মাধ্যমে শিশুর শরীরের শক্তির স্তর বাড়ানো যায় এবং এটি হজমে সহায়ক। মিষ্টির মধ্যে এটি একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প, যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
Carrot Chow Mein:
গাজরের চাউমিন একটি চমৎকার হেলদি ডিশ। এটি শিশুদের জন্য একটি পুষ্টিকর খাবার, যেখানে রয়েছে গাজরের ভিটামিন, খনিজ, এবং ফাইবার। গাজর চাউমিন শিশুর চোখের স্বাস্থ্য এবং দেহের পুষ্টি বাড়াতে সাহায্য করে।
Binni Fruity Meal:
বিনি ফ্রুটি মিল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার। এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফল, যা ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। এটি শিশুর শক্তির স্তর বৃদ্ধি করে এবং পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
ZUPPA Cereal Soup:
জুপ্পা সিরিয়াল স্যুপ একটি স্বাস্থ্যকর স্যুপ, যা শিশুর হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি সিরিয়াল, সবজি, এবং প্রাকৃতিক মশলা দিয়ে তৈরি, যা শিশুর পেটের সমস্যা সমাধান করতে পারে।
Sprouted Fruity Mix:
স্প্রাউটেড ফ্রুটি মিক্স হলো একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার, যেখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফল এবং স্প্রাউটস (অঙ্কুরিত শস্য)। এটি শিশুর শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে এবং তার উন্নতির জন্য প্রাকৃতিক পুষ্টি প্রদান করে।
কিভাবে অর্ডার করা যাবে?
আমাদের হোমমেড খাবার অর্ডার করতে ওয়েবসাইট ভিজিট করে সেখান থেকে আপনি পছন্দ মোতাবেক যেকোনো খাবার সহজেই অর্ডার করতে পারবেন।
অথবা,বেবিবাইটস ফেসবুক পেজ এ মেসেজ দিয়ে অর্ডার কনফার্ম করতে পারবেন।
১৬. শিশুর খাবার নিয়ে কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
শিশুর খাবারের সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলি অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজন হতে পারে। যেমন, শিশুর ওজন বাড়ছে না, অথবা সে বারবার অসুস্থ হচ্ছে, খেতে চাচ্ছে না ইত্যাদি। এই পরিস্থিতিতে শিশুর ডাক্তার দেখানো উচিত।
এছাড়া, যদি শিশুর খাওয়ার অভ্যেসে পরিবর্তন আসে, বিশেষ করে যদি খাবারের প্রতি অমনোযোগী বা অনাগ্রহী হয়ে যায়, তাও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। একইভাবে, যদি শিশু হজমের সমস্যা, পেটের ব্যথা বা কোন সর্দি-কাশি সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রতিনিয়ত শিশুর স্বাস্থ্যের পরিবর্তনগুলি পর্যালোচনা করা জরুরি। এতে শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে সাহায্য হবে।
১৭. উপসংহার
শিশুর জন্য সঠিক খাবার নির্বাচন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, এবং এটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন। সঠিক পুষ্টি দেওয়া শিশুর শক্তি, বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।
বেবিবাইটস হোমমেড খাবারের মাধ্যমে শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব, এবং মা-বাবারা সহজে এই স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো অর্ডার করে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারেন।
শিশুর খাবারের প্রতি আপনার যত্ন এবং সঠিক মনোযোগ তাকে সুস্থ ও শক্তিশালী করে তুলবে। তাই, শিশুর জন্য পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করুন, এবং তার জীবনের পরবর্তী পর্যায়টি আরও আনন্দময় করুন।
প্রশ্ন ও উত্তর:
শিশুর আদর্শ খাদ্য কোনটি?
শিশুর জন্য আদর্শ খাবার হলো সুষম খাদ্য, যা শাক-সবজি, ফল, মাংস, মাছ, ডাল এবং পুরো শস্য দিয়ে তৈরি।
বাচ্চারা কি খেলে বুদ্ধি বাড়ে?
মাছ, ডিম, বাদাম, দুধ ও ফলমূল খেলে বাচ্চার বুদ্ধি বাড়তে সাহায্য করে।
বাচ্চাদের পুষ্টিকর খাবার কি কি?
পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে শাক-সবজি, ফলমূল, মাংস, ডিম, দুধ, ওটস, চালের গুঁড়া, সুজি ইত্যাদি।
৮ মাসের বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত?
৮ মাসের বাচ্চার ওজন প্রায় ৭-৯ কেজি হতে পারে।
কোন ফল খেলে বাচ্চার ওজন বাড়ে?
কলা, আপেল, পাকা আম, পেঁপে এসব ফল বাচ্চার ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
কি খেলে বাচ্চা মোটা হয়?
ডিম, পনির, ঘি, দুধ, মিষ্টি আলু এসব খাবার খেলে বাচ্চার ওজন বাড়তে সাহায্য করে।
কোন খাবার খেলে বাচ্চা বড় হয়?
প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, এবং ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন মাংস, দুধ, ডিম এবং সবজি শিশুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
১৯ মাসের শিশুর খাদ্য তালিকা
- সকালে: সেদ্ধ ডিম, নরম রুটি, কলা বা অন্য ফল
- দুপুরে: নরম ভাত, ডাল, সেদ্ধ সবজি (লাউ, মিষ্টি কুমড়া, করলা), মাছ বা মুরগির ছোট টুকরো
- বিকেলে: দুধ বা স্যুপ, নরম মুড়ি বা সুজি
- রাতে: একটু নরম খিচুড়ি, ভাতের সঙ্গে সবজি আর ডিম
বি দ্র: পানির অভ্যাস গড়ে তুলতে দিনে কয়েকবার পানি খাওয়াতে হবে
বাচ্চাদের কি খাওয়ালে ব্রেন ভালো হয়?
মাছ, ডিম, বাদাম, ফলমূল এবং দুধ শিশুর ব্রেন ডেভেলপমেন্টে সাহায্য করে।
বাচ্চা খেতে না চাইলে কি করা উচিত?
ধৈর্য সহকারে চেষ্টা করুন, কখনোই জোর করে খাওয়াবেন না।